প্রতিটি মানুষ কিছু স্বপ্ন, সাধনা ও প্রাত্যহিক যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতে পথ চলার সাহস অর্জন করে। মানুষ যেহেতু একাকী বাঁচতে পারে না, বাঁচা যায় না; সেহেতু যূথবদ্ধভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে এবং শিল্প-সংস্কৃতি- সাহিত্য ও সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে দিয়ে মানুষের কাছে, মানুষের পাশে থাকার ঐকান্তিক ইচ্ছা থেকে হাজার ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয় দি গৌরী কালচারাল অ্যান্ড এডুকেশনাল অ্যাসোসিয়েশন।
উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানার চারঘাট গ্রামে গৌরী কালচারপ্রতিষ্ঠিত হয়। তখন এই সংগঠন করার নেপথ্যে ছিলেন অধ্যাপক ঊষাপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক হায়দার আলি, অধ্যাপক দিলীপ ভট্টাচার্য এবং আমার মাস্টার মশাইরা। যেসব ছেলে-মেয়ে পড়াশোনার জগৎ থেকে পিছিয়ে গিয়েছিল কিংবা যাদের স্বল্প বয়সে বিবাহের আয়োজন করতেই পরিবার-পরিজন-স্বজনরা ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন; তাদেরকে মূলত পড়াশোনার জগতে ফিরিয়ে আনার জন্য গৌরী কালচার কাজ করে। একদল ছেলে-মেয়ে সারাদিন বসে বসে ভাবতে থাকে কীভাবে শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটানো যায় l এর সঙ্গে চলতে থাকে আশীর্বাদ নাট্য সংস্থার নামে নিয়মিত নাটক চর্চা। প্রতিমাসের রবিবারে শুরু হতো সাহিত্য বাসর। সেই সাহিত্য বাসরের নাম সৃজনী। নিয়মিত কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ পাঠ হত। গ্রামের যারা পড়াশুনোর আলো পাওয়ার জন্য আমাদের কাছে এগিয়ে আসত, তাদেরকে সংঘবদ্ধ করে তৈরি করা হয় বিনা পারিশ্রমিকে পড়াশোনার প্রস্তুতি। সেই কাজ অবশ্য এখনও হয়। বিশেষ করে দরিদ্র ছেলে-। মেয়েদের কলেজ সার্ভিস কমিশনে চাকরি পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি পর্বের ব্যবস্থা করেন আমাদেরই সংঘের ড. তাপস পাল।
সময়ের সেই বহমানতার সূত্র ধরে গৌরী কালচার তার কাজকর্মকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যতখানি সম্ভব চেষ্টা করে চলেছে। সেই প্রচেষ্টা থেকে বেশ কিছু সামাজিক কাজকর্ম এবং রিলিফের কাজ ধারাবাহিকতা করে এই সংগঠন।
এই কর্মসূত্র ধরে আম্ফান-এর মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং কোভিদের মতো মারণব্যাধিতে এই সংগঠন মানুষের পাশে থেকেছে।
সংগঠনের সামাজিক কাজকর্মের মূল লক্ষ্য আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া হতদরিদ্র ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা। মূলত মেয়েদের পড়াশোনার দিকে এই সংগঠন বিশেষ নজর রাখে। আর আদিবাসী ছেলে মেয়েরা যাতে পড়াশোনার আলোয় আসতে পারে তার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করে। সংগঠনের রিলিফের কাজ দেখাশোনা করেন দীপ্ত সরদার ও পিয়ালী দাশগুপ্ত। এছাড়া এইসব কর্মের সঙ্গে নিরন্তর রয়েছেন অভিষেক সিকদার, পুষ্পেন্দু মজুমদার, দীপক ঘোষ, সঞ্জয় দে, মনসা ঘাটা, মিলন সিংহ, সৈকত মাহাতো প্রমুখ।
সংগঠন শিক্ষামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। তার মধ্যে তিনটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এই তিনটি পত্রিকা হল– তবু একলব্য, সন্ধান এবং দিয়া। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রের আয়োজন করে এই সংগঠন। অন্তর্জালিক মাধ্যমে রবিবারের থিয়েটার বলে কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে চালিয়েছে এই সংগঠন। বর্তমানে সংগঠনের সদস্যরা নিয়মিত সাহিত্য ও সসংস্কৃতচর্চার মধ্য দিয়ে সংগঠনের নিজস্ব ভাবনাকে এবং তাদের সৃজনশীলতাকে মানুষের সামনে তুলে ধরে।
আমাদের সংগঠনের সভাপতি বিপ্লব মাজী, সহ-সভাপতি তপন মন্ডল, সংগঠনের মুখ্য উপদেষ্টক আশিস চট্টোপাধ্যায়। সংগঠনের সঙ্গে রয়েছেন সোনালী মুখোপাধ্যায়, উদয়চাঁদ দাশ, বিদিশা সিনহা, সোমা ভদ্র রায়, সুশীল সাহা, হৃষিতা দাস বকশি, সৌমি দাশ, মৌমিতা মজুমদার, বিদিশা ঘোষ দস্তিদার, চিত্রা সরকার, গৌতম দাস প্রমুখ। রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির- এর সঙ্গেই সংঘের মৌ চুক্তি রয়েছে। বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে নির্দেশাবলী দেন রামকৃষ্ণ মিশন সারদা পীঠ- এর সম্পাদক পূজ্যপাদ স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানন্দ।
- Swami Vivekananda
Contact Us